বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ৪, ২০২৫
spot_img

ইব্রাহিম আদহাম ও ঈমাম গায্যালী (রা.)’র দুটি শিক্ষণীয় ঘটনা

ড. মুহম্মদ মাসুম চৌধুরী :
(১)
ইব্রাহিম আদহামের কথা সচেতন মানুষ জানে। তিনি প্রায় দেশ বিদেশ ভ্রমণ করতেন। একবার বহু দেশ বিদেশ ভ্রমণ করে তিনি জনমানবহীন অরণ্যে বসবাস করতে শুরু করেন। তাঁর কাছে মানুষের চেয়ে অরণ্যের পশুপাখি গাছপালা সংযত মনে হলো। অরণ্যে পশু পাখিরাও তাঁর সাথে জিকির করতো। বনে শিকারীরা খাঁচা ও জালের মধ্যে পাখির প্রিয় ফলফলাধি ও খাদ্যদ্রব্য রেখে পাখি শিকার করতো। ইব্রাহিম আদহাম পাখির ভাষা বুঝতে পারতেন। পাখিদের তিনি বললো, ‘আমরা শিকারীর খাদ্য খাবে না’ সবাই মিলে এই স্লোগানটি মুখস্ত করো,। তিনি তালে তালে ছন্দে ছন্দে পাখিদের এই শ্লোগান মুখস্ত করালেন। এটি মুখস্থ করাতে তাঁর এক বছর সময় লাগলো। একটি পাখি যখন বলতো শিকারীর খাবার খাব না, সব পাখি তাল ও সূর মিলিয়ে এই শ্লোগান উচ্চারণ করতো। এক দিন যখন শিকারী এলো সব পাখি তখন বললো ‘আমরা শিকারীর খাবার খাব না’। পাখিদের স্লোগান শুনে শিকারী পালাতে লাগলো। পাখিও তাকে পিছন হতে তাড়াতে লাগলো।কিছু সময় পর কিছু পাখির দৃষ্টি খাবারের দিকে পড়ল। পাখিগুলো, ‘শিকারীর খাবার খাবনা’ শ্লোগান দিয়ে শিকারীর আনা খাবারের ওপর ঝাপিয়ে পড়লো। পাখির খাবারের লোভ দেখে শিকারী আবার খাবারগুলো জালের মধ্যে রাখলো,দলে দলে পাখি জালের মধ্যে খাওয়ার খেতে ঢুকতে থাকে।
শিকারী আবার অনেক পাখি ধরে ফেললো, হযরত ইব্রাহিম আদহাম পাখিদের একটি বাক্য শিখিয়েছেন কিন্তু পাখিদের এই বাক্যটির মর্মার্থ বুঝাননি। পাখিরা বাক্যটির অর্থ বুঝেনি। আজ শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের সন্তানদের পাখির বুলির মত অবস্থা হয়েছে। জানি না পাখিগুলোর মত আমাদের পরিণতি হবে কিনা!
সব শিক্ষকরা বলে পড় পড় পড়, অভিভাবকরাও বলে পড় পড় পড়, বেশি করে পড়। আমি বলি পড় কম ভাবো বেশি। আমরা সন্তানদের পড়াচ্ছি, মুখস্ত করাচ্ছি, শিক্ষার মর্মার্থ বুঝার ব্যবস্থা করছিনা। আজ যে সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতির কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করছি, সে সৃজনশীল পদ্ধতির উৎস আধুনিক বিজ্ঞানীদের সেরা বিজ্ঞানী আলভার্ট আইনস্টাইনের একটি সাধারণ উক্তি, ‘জ্ঞানের চেয়ে কল্পনা শক্তি অনেক বড়’। এই সাধারণ উক্তিটির মধ্যে অসাধারণ মর্মার্থ নিহিত আছে, তা বুঝতে আমাদের সত্তর বছরের অধিক সময় লাগছে। ১৪’শত বছর পূর্বেই এই কথাটিই মর্মার্থ আমরা পবিত্র কোরানের ‘তাকাফফুর’ শব্দে হতে পেয়েছি। ‘তাকাফফুর’ অর্থ চিন্তা করা, গবেষণা করা। ‘কোরআন’ অর্থ পড়া, ‘তেলাওয়াত’ অর্থ পড়া, কেরাত’ শব্দটির অর্থও পড়া। মহান আল্লাহ পাক পড়ার সাথে সাথে চিন্তা ও গবেষণা করতে ‘তাকাফফুর’ শব্দটির কথা কোরআনে বর্ণনা করেছেন। আলভার্ট আইনস্টাইনের সেবা আবিষ্কার Theory of Relativity, এই তত্ত্ব আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বুঝাতে তিনি আমন্ত্রণ পান। তিনি আমেরিকায় গিয়ে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তত্ত্বটি বুঝাতে একই বক্তব্য বার বার দিলেন।ড্রাইভার আইনস্টাইনকে বললো, স্যার আপনার বক্তব্যটি শুনতে শুনতে পুরো আমার মুখস্ত হয়ে গেছে। আইনস্টাইন ড্রাইভারকে বললো, তুমি আমার ড্রেসটি পর আমি তোমার ড্রেসটি পরি, পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বক্তব্যটি তুমি দিবে। ড্রাইভার পুরো মুখস্ত বক্তব্যটি দেওয়ার পর এক প্রশ্নকর্তা বক্তব্য হাতে একটি প্রশ্ন করলো। সে তো বক্তব্য মুখস্ত করেছে, বিজ্ঞানের তত্ত্বটি আত্মস্থ করতে পারেনি। কিন্তু ড্রাইভার ছিল বৃদ্ধিমান।ড্রাইভার উত্তরে বললো, এই ছোট সাধারণ প্রশ্নটির উত্তর আমি দিবো না,আমার ড্রাইভার দিবে। ড্রাইভারের চেয়ার হতে আইনস্টাইন দাঁড়িয়ে সুন্দর ভাবে উত্তরটি দিলেন, উপস্থিত বিজ্ঞানীরা ভাবতে থাকেন আইনস্টাইনের ড্রাইভার এত জ্ঞানী হলে আইনস্টাইন কত বড় জ্ঞানী! আশা করি বুঝা গেল মুখস্ত মানে জ্ঞানী নয়, আইনস্টাইন নন। আইনস্টাইন-নিউটনের মত বড় বড় বিজ্ঞানীদের অনেক সাধারণ কিছু মনে থাকতো না। (যেমন, লন্ডনে একবার আইনস্টাইন তাঁর বাড়ীর ঠিকানা ভুলে যায়, এক বিজ্ঞানী রেশনের জিনিস নিতে গিয়ে নিজের নাম ভুলে যায়, নিউটন মুরগীর জন্য একটি ঘর তৈরি করে দু’টি দরজা রাখে, একটি মুরগির জন্য অন্যটি মুরগির বাচ্চার জন্য। তাঁর মাথায় আসলো না বড় দরজা দিয়ে মুরগি ও মুরগির বাচ্চা উভয়ই বের হতে পারবে) এ সবের কারণ কী? তাঁরা কী পাগল বা মেধা-হীন ছিলেন ? হ্যাঁ তা অনেকে ভাবতে পারেন কিন্তু তা নয়। তারা মাথায় তথ্য জমা রাখতেন না, তথ্য বিশ্লেষণ করতে পঞ্চইন্দ্রিয় দিয়ে। আমরা মুখস্ত করে শুধু মাথার তথ্য জমা রাখি কিন্তু বিশ্লেষণ করি না। তথ্য বিশ্লেষণ করার নাম সৃজনশীলতা। আমরা বহু বছর আগে দেশে সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি চালু করেছি কিন্তু আমরা প্রকৃত সৃজনশীল শিক্ষা পদ্ধতি আত্মস্থ করতে পারিনি।
(২)
ইসলামের সেরা দার্শনিক ইমাম গায‍্যালী (রা.)’র তেমন বেশি তথ্য মাথায় রাখতে পারতেন না, তাই তথ্য ডায়েবীতে লিখে রাখতেন। একদিন পথে ডাকাত দল তথ্যের ডায়েরীগুলোসহ সব টাকা পায়সা লুট করে নিয়ে যায়। ইমাম পায্যালী (রা.)’র ভিতরের পকেটে রাখা তিনটি স্বর্ণের মোহর ডাকাতরা খোঁজে পায়নি। সে মোহরগুলো নিয়ে তিনি ডাকাত দলের পিছনে দৌড়েন। ডাকাতরা জানতে চাইলো তাঁর কাছে, দৌড়ার কারণ কী? তিনি বললেন, তোমরা আমার কাছে তিনটি সোনার মোহর খুঁজে পাওনি, এসব নিয়ে যাও, কিন্তু আমার ডায়েরীগুলো আমাকে দিয়ে দাও। ডাকাত সর্দাব জানতে চাইলো, তোমার ডায়েরীতে কী আছে? তিনি জানালেন, আমার জ্ঞান-সম্পদ। ডাকাত মোহরগুলো নিয়ে বললো, যে জ্ঞান চোর ডাকাতে নিয়ে যেতে পারে সে জ্ঞান দিয়ে তোমার কী লাভ হবে? কথাগুলো শুনে তাঁর চেতনা ফিরে আসে। সেদিন হতে তিনি আর লিখে লিখে তথ্য জমা করেননি, তথ্য বিশ্লেষণে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। জ্ঞান সাধনায় ধ্যানের মাধ্যমে তাঁর খুলে যায় অন্তরচক্ষু। তিনি হয়ে উঠেন এক আধ্যাত্মিক মহাপুরুষ।-লেখক: কলাম লেখক, রাজনীতিক

সর্বশেষ

যুক্তরাষ্ট্র আ.লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক নিযুক্ত সঞ্জয় কুমার সাহা

পূর্বকাল ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক...

পাঠ্যপুস্তক

রতন চন্দ্র পাল, অতিথি লেখক: মানব সভ্যতার শ্রেষ্ঠ প্রকাশ...

ইজারাদারদের দাবি, সাতকানিয়া দেওয়ানহাট বাজার পরিচালনায় সুশাসন নিশ্চিতকরণের

অনলাইন ডেস্ক: সাতকানিয়ার দেওয়ানহাট বাজার পরিচালনায় সুশাসন নিশ্চিতকরণের দাবী...

আ.লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হলেন বিধান রক্ষিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক...

সাতকানিয়ার কেরানীহাটে আশ্-শেফা স্কুল এন্ড কলেজে নাতে রাসুল (সাঃ) প্রতিযোগিতা সম্পন্ন

এস এম আনোয়ার হোসেন, দক্ষিণ চট্টগ্রাম: পবিত্র রবিউল আউয়াল...
spot_img