নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সংগঠিত গণহত্যায় বাংলাদেশ পুলিশের কর্মকান্ডের কারণে পুলিশের পোশাক দেখে এখনো ভীতির সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, খুনি বাংলাদেশ পুলিশের মতো প্রতিষ্ঠানকে পশুর মতো ব্যবহার করে বাংলাদেশের মানুষকে নরপশুর মতো খুন করেছে। আপনাদের পোশাক দেখে এখনো আমাদের ভীতির সৃষ্টি হয়। এখনো আমাদের মনে ঘৃণার সৃষ্টি হয় এবং এটার জন্য কেবল খুনি হাসিনা দায়ী এবং আপনাদের ব্যক্তিত্ব দায়ী। আপনারা ক্ষমতার লোভে, পদের লোভে ওই পোশাকটিকে ধারণ করে অপব্যবহার করে সারা বাংলাদেশে নানারকম কুকর্মে সহযোগিতা করেছেন।
শনিবার সকালে নগরের চট্টগ্রাম প্রাইমারি টিচার্স ইনিস্টিউটে শহীদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম ‘শহীদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ’ নামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
সারজিস আলম আরও বলেন, ‘সেনাবাহিনী যদি চাইতো ৫ তারিখে দশ হাজার মানুষকে খুন করে হাসিনাকে মসনদে বসিয়ে রাখতে পারতো। কিন্তু তারা সেটা করেনি। তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের সম্মানের কথা চিন্তা করেছেন। আপনারা কিসের কথা চিন্তা করেছেন? আপনারা চিন্তা করেছেন আপনাদের পদবীর কথা, ওই খুনির হুকুমের কথা, ওই খুনির দাসত্বের কথা। যারা রক্ত দিয়েছে জীবন দিয়েছে ওই পরিবারের কাছে কী জবাব দিবেন? আজকেও এতো খুনের পরে, এতো জীবনের পরে এই বাংলাদেশে আবারও কিছু পুলিশ সদস্য ওই পোশাক পরে আবার টাকা নিচ্ছে, আবার দালালি করছে, আবার দাসত্ব করছে, আবার একটি দলের হয়ে কাজ করছে। বুকের মধ্যে যদি এইটুকু লালসা থাকে দয়া করে পোশাকটা খুলে চলে যান।
আর্থিক সহায়তা কখনো পরিবারের অভাব পূরণ করতে পারবে না উল্লেখ করে সারজিস আলম বলেন, ছেলে হারানো মা-বাবা. বাবা হারানো সন্তান, স্বামী হারানো স্ত্রীসহ অসংখ্য মানুষের দিনের পর দিন তাদের এই কান্না দেখতে দেখতে আমরা প্রত্যেকেই যারা এটার সম্পৃক্ত তারা আমরা আমাদের জায়গা থেকে মেন্টালি ট্রমাটাইজড। আমরা আমাদের জান প্রাণ দিয়ে নিজেদের চোখের পানি আটকে রাখার চেষ্টা করি। আমরা অনেক কষ্ট করে আমাদের সকল আবেগ চেপে রাখি। কিন্তু যখন একজন মা বুকফাটা আর্তনাদ করে চিৎকার করে এই কথা বলে যে সে আর কিছু চায় না, শুধু তার সন্তানের খুনের বিচার চায়। যখন আমরা দেখি আমার এক ভাই জন্মগ্রহণ করছে এই পৃতিবীতে তার বয়স দুই মাস, তিনমাস, একমাস। জন্ম নেওয়ার পরে এই পৃথিবীতে তার বাবার কোলে কোনোদিন উঠতে পারেনি। এমনো অনেক বোন রয়েছে যার বিয়ের এখনো কয়েক মাস পূরণ হয়নি। তার সারাজীবনের অবলম্বন তার জীবনসঙ্গীকে হারিয়েছেন। এমন অনেক মা বাবা ভাইবোন রয়েছেন যারা তাদের একমাত্র ভাইকে হারিয়েছে, একমাত্র অবলম্বনকে হারিয়েছে। আজকে তারা নিঃস্ব। আমরা যতই সাস্তনা দেই, যতই তাদের বলি আমরা ভাই হয়ে থাকবো, পরিবারের একজন হয়ে থাকবো, এই পৃথিবীতে সেটা কোনোদিনই সম্ভব নয়। এই আর্থিক সহযোগিতা কোনোদিনও সেই ভাইয়ের অভাব, তার ওই জীবনসঙ্গীর অভাব, পরিবারের অবলম্বনের অভাব কোনোদিন পূরণ করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, এই যে এতোবড় একটা রক্তাক্ত গণহত্যা, হাজার হাজার মানুষ খুন, হাজার হাজার মানুষের রক্ত ঝরিয়েছে তারপরেও এই বাংলাদেশে এই খুনিদের নাম আবার উচ্চারিত হয়। তারপরেও এই বাংলাদেশে ওই খুনিদের সাফাই খাওয়া হয়, তারপরেও এই বাংলাদেশে এই খুনিদের রাজনৈতিক অধিকার নিয়ে কথা বলা হয়। যেই খুনি বিগত ১৬ বছরে পরিবারের কয়েকজনের খুনের মায়কান্না করেছে, সে যদি মায়াকান্না না করতো তবে দুই হাজার মানুষকে কীভাবে খুন করতো। এই খুনিরা এরা হচ্ছে একেকজন প্যাথলজিক্যাল কিলার। যেই কিলার ওই গোপালগঞ্জের শেখ পরিবার থেকে উঠে এসেছে। এই খুনি বিগত ১৬ বছরে বাংলাদেশের মানুষকে নানাভাবে খুন করেছে। কিন্তু তারা মিডিয়াসহ পুরো বাংলাদেশকে জিম্মী করে রাখার জন্য এই খুনি এই খুনগুলোকে সামনে আসতে দেয়নি। এসময় উপস্থিত ছিলেন শহীদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রামের সমন্বয়কসহ আরও অনেকে।
প্রসঙ্গত, ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’ উদ্যোগে ‘শহীদ পরিবারের পাশে বাংলাদেশ’শিরোনামে শুরু হওয়া এ সহায়তা কার্যক্রমের আওতায় চট্টগ্রাম বিভাগের ১৫২ পরিবারের মধ্যে ১০৫ পরিবারকে ৫ লাখ টাকার চেক হস্তান্তর করা হয়। বাকি পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া শেষে চেক পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।