কবি-এহছানুল আজিম’র একগুচ্ছ কবিতা
ক্ষমা কর প্রভু
————–
ভুবনে আসিয়া কাঁদিয়া হাসিয়া ফাঁসিয়া-
গুনাহ পাপ করি যদি কভু
ক্ষমা করো প্রভু ক্ষমা করো প্রভু।
পিতা মাতার বিবাহ বন্ধন শুভ পরিণয়ে ভূমিষ্ঠ হয়ে কান্নার চিৎকারে এসেছি এই বিশ্ব ভূমন্ডলে-
নিষ্পাপ হয়ে এসেছিলাম ধরনী তলে
আতুর ঘরে বাতি হয়ে যেদিন এলাম জননীর কোলে ,
মা জননীর দুগ্ধ করে পান-
মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়ে হয়েছি মুসলমান।
মাওলানা মৌলভী এসেছে ঘরে
দুই কানে দিয়েছে আজান মধুর স্বরে
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ….
আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ
কানে দেওয়া সেই মধুর আযানের ধ্বনি করিনি মনে লালন
নামাজ রোজা হজ্ব যাকাত করিনি কভু পালন।
শয়তানের ধোঁকায় পড়ে জনম গেলো পাপে ভরে
কেমন করে যাব আমি বালিশ বিছানা বিহীন অন্ধকার ওই মাটির ঘরে-
পাহাড় সমান সম্পদ করেছি অটেল অর্থ সঞ্চয় করেছি করিতে পারি নাই সঞ্চয়
ইসলামের আকীদা ঈমান মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়ে হয়েছি মুসলমান-
খালি হাতে আজ এসেছি
আল্লাহর ঘর মসজিদে
দারোগাহা থেকে দারোগাহে
নিজের উপর অত্যাধিক জুলুম করেছি
করিতে পারিনা পাঠ সুরা কেরাত
কেমন করে যাব পুলসিরাতের ওপার
সরল পথ দেখাও মোরে
পার করিও পুলসিরাত
হরি এই ফরিয়াদ ।
জানিনা মনকির নাকিরের প্রশ্নের জবাব আমি দেবো কেমন করে
ঈমানের সাথে নিও দয়াল অন্ধকার ঐ মাটির কবরে –
মরনক্ষণে আমার কন্ঠে যেন উচ্চারিত হয় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ
দেখিতে পারি যেন কেবলা ।
একলা এসেছি ভবে যাব ফিরে একলা –
সঙ্গে যেন নিতে পারি পাঁচ কলেমা
করি এই ভাবনা এই মোনাজাত
কবুল করো মোর এই ফরিয়াদ।।
ইচ্ছায় অনিচ্ছায় শয়তানের ধোঁকায় পাপ মহাপাপ গুনাহ যদি করি কভু
ক্ষমা করো প্রভু ক্ষমা করো প্রভু।।
নীরব প্রেমের দাবানল
———————
তোমায় মনে পড়ছে
আজ আলোর গগনে মেঘ জমেছে
নেমেছে কালো ছায়া
ঘর ভাঙ্গা ঝড়ের জন্য
লেগেছে মনের মায়া ।
এই গগনো মেঘের ছায়া- মায়া
শুধু সাগর জলে লোকালয়
কিংবা বাগান বনায়নে পড়ছে না
আমার হৃদয়ে পড়ছে-
তোমার মনে পড়ছে।
ভয়াল মেঘের আড়ালে স্নিগ্ধ চাঁদের আলো পড়েছে ডাকা-
অথই সাগরে আমি একা
হিমেল হাওয়ায় তোমার বুকের সেই অমৃত ঘ্রাণ আমার নিঃশ্বাস টের পাচ্ছে-
রেখে যাওয়া মধুর পরশ বারে বারে স্মৃতির দুয়ারে কড়া নাড়ছে-
তোমায় মনে পড়ছে।
দূরের আকাশের তারা তুমি
আলোয় ভরালে যে মরুভূমি
অবেলায় সে পথ ছাড়লে
রেখে গেলে যাহা বয়ে বেড়াই তাহা
তোমার হেলায় খেলায় বালুচরে বাধা স্বপ্নের নীল নীড় আজি
চিতার আগুনে জ্বলছে
তোমায় মনে পড়ছে।
অজানা দাবানলে পাহাড় থেকে পর্বত জঙ্গল থেকে জঙ্গল বন থেকে বনায়ন এই অতৃপ্ত মন পুড়ছে –
চারিদিকে আগুন আর আগুন-
কামনার আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে-
নীরব প্রেমের দাবানলে, অবুঝ হৃদয় পুড়ছে-তোমায় মনে পড়ছে।
ক্ষণিকের মায়া মোহ
———————
কবিতার বই বিন্নি ধানের খই
গিলিতে খুব মজা-
কোন চয়নে হৃদয় উদ্ভাসিত হয়
কোন পংক্তির কোমল স্পর্শে ছলছল নয়নে অশ্রু আসে
কখনো কল্পনায় হারিয়ে যাই
দুই চোখ অজানা স্বপ্নে মৃদু হাসে
ললিতা, আবৃতি শেষে সেসব কি আর তোমার চোখে ভাসে
বিকেলে বা রাতে রোমান্টিক প্রেমের কবিতা
যতক্ষণ পড়া হয় ছন্দে ছন্দে
মন দোলে হরেক রকম রঙে আনন্দে-
কবিতার ছন্দে আনন্দে যে হৃদয় দোলে,দোলিতে দোলিতে তাহা ক্ষণিক পরেই ক্ষান্ত হয় ।
শেষের পর্ব পরে সবই শেষ হয়।
সিনেমা হলের বড়পর্দায় লাইলি মজনু,সিরি ফরহাদ বা দেবদাসের প্রেমের কাহিনী পূর্ণদৈর্ঘ্য বাংলা সিনেমা আয়না-
বিরতির আগ পর্যন্ত বড় পর্দা থেকে দৃষ্টি সরানো যায় না –
অতঃপর এককাপ গরম চা
আবার হলে ফিরে আসা
আহা কি যে ভালোবাসা মধু চন্দ্রিমা
হাসি কান্না কত না উন্মাদনা
শেষ দৃশ্যে বিরহ বিচ্ছেদ
না পাওয়ার বেদনা।
তব,তিন ঘণ্টার সিনেমা শেষে ছবির রঙিন পর্দা পেছনে পড়ে থাকে-
সামনে এসে দাঁড়ায় জীবনের বাস্তবতা-
জীবন মানে সিনেমা নয়! অবিরাম সম্মুখ
পানে এগিয়ে চলার ব্যস্ততা।
ট্রেন ভ্রমণ,পথে পথে কতনা স্টেশন
কেউ উঠে কেউ নামে, এরই মধ্যে কারো সাথে হয় ক্ষণিকের পরিচয়।
সামনের স্টেশনে হয়তো
কেউ একজন নেমে যায়
কিছু কথা কিছু স্মৃতি
আনন্দ বেদনা রয়ে যায়।।
ট্রেন শেষ স্টেশনে এসে দাঁড়ায়
যাত্রী সবে যার যার গন্তব্যে ছুটেযায়-
পেছনে রয়ে যায় পথের পরিচয়
কেউ ঠিকানা খুঁজে পায়
কেউ পথের ধোঁকায় পথ হারায়।
কর্ণফুলীর উজান গাঙের ডাকে
মুখে আল্লাহর নাম আর সাম্পানওয়ালার গানে
পাল উড়াইয়া চলে সাম্পান মহেশখালীর বাঁকে –
আকাশ ডাকে ঘুম ঘুম
নামে অন্ধকার
মেঘ জমে চারিদিকে হাকিয়া হাকিয়া
আপন কুলায় ফিরে যায় গাংচিল শঙ্খ সালিক পাখিরা-
বাতাস সন সন শীতে কন কন আপন দোলায় দোলে
দু’ পাড়ে ঝাউবন শাখে শাখে
খেয়া পার পরে সখি, মাঝিরে কে বা মনে রাখে।
জীবনের বৈচিত্র্যময় এই খেলা আর জীবনে রঙের মেলা ক্ষণিকের মায়া মোহ-
পাপড়ি শুখিয়ে গেল প্রেমো গোলাফ খোঁপায় গুজিয়া রাখেনা কভু কেহ।।
মানুষের মূল্য
—————
কই শুনছো বাজারে ব্যাগটা ধরো আটটা বাজে
অনেক ময়লা লেগেছে গায়ে গোসল সেরে আসছি
নাস্তাটা টেবিলে দাও যেতে হবে কাজে।
নাও তাউলটা ধরো বাজারের হালচাল বল
বাজারে সোতাটা পকেটে আছে ডাল চাল সবজি- বেগুন মরিচ যত যা আছে সব দাম লেখা আছে।
তা না হয় দেখলাম বল তবে বাজার কেন থলের তলে ?
হ্যাঁ গো বাড়ির লোকে বলছে বাজারের দাম নাকি কমেছে?
হ্যাঁ লোকে ঠিক বলেছে
আসলে বেগুন মুলা আলু পটলের দাম নয়-
মানুষের দাম কমেছে ।
শুনে এলাম বকাটেরা নাকি
আমাদের রমজান চাচার স্কুল পড়ুয়া মেয়েটারে রাস্তা থেকে কিডন্যাপ করেছে
পুলিশ তাদের ধরেছে
তবে চাচার ধর্ষিতা মেয়েটা লোকও লজ্জায় ফ্যানের সাথে ওড়না পেঁচিয়ে অকালে মরেছে –
মুলা বেগুন আলু পটলের দাম নয়
মা বোনদের ইজ্জতের দাম কমেছে ।
আজকের পত্রিকায় দেখো কত মৃত্যুর খবর ছাপিয়েছে
খবরের কাগজের মূল্য নয়
জীবনের মূল্য কমেছে।।
বুঝিনা গো তোমার কথায় মন দুরুদুরু কাঁপছে
বিশ্ববিদ্যালয় কদিন থেকে গোলমাল চলছে
মেয়েটা কলেজে পড়ে ছেলেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে
না জানি ছেলেমেয়েরা কখন পড়ে যায় কোন গন্ডগোলে !
আমি অফিসে গেলাম কাজের ফাঁকে ছেলেমেয়েদের খোঁজ খবর নিও
আমার কলিক রঞ্জু ছিনতাইকারীর ছুড়ি আঘাতে অনেকদিন হাসপাতালে থেকে চিকিৎসার অভাবে মরেছে কাতরাতে কাতরাতে-
ভাবি কদিন থেকে পেনশনের টাকা উঠাতে টেবিলে থেকে টেবিলে গুরছে
রঞ্জুর কাছের কলিগরাও সহযোগিতার নামে ভাবির কাছে নির্লজ্জ সুযোগ খুঁজছে
আলু মুলা বেগুন পটলের মূল্য নয়
আমাদের মূল্যবোধের মূল্য কমছে।।
মজুদ দারের আরত থেকে রাস্তার ধারে বসেছেন ন্যায্য মূল্যের দোকান
জানিনা কোন ভূতেরা এই ন্যায্য মূল্য নির্ধারণ করছে
রেশনের দোকানে দরিদ্র মানুষের লাইন দিনের পর দিন বাড়ছে
রাস্তার ধারে ফুটপাতে অনাহারে অর্ধাহারে ক্ষুদিতেরা নিভৃতে মরছে-
তবু ন্যায্য মূল্যের দোকানে পণ্যের মূল্য কি কমেছে?
ন্যায্য মূল্যে মানুষের মূল্য কমেছে।।