
বৈষম্যের বুকে লাঙ্গল চালা
কবি-এহছানুল আজিম
লিখবো না আর কবিতা গাইবো না আর গান
মোরা ও রানীর সাথে নাচ করিব সুরার পেয়ালা আন।
শুনবো না আর নীতিকথা ভাঙবো এবার আদি প্রথা
নীতির মশাল জ্বালো
রীতি নীতির দোহাই দিয়ে
ওয়া খাচ্ছে রক্ত দিনের শেষে-
কামার কুমার জেলে মাঝি কৃষকের শ্রমিকের এই দেশে
ঢাকাতের পর ডাকাত আসে
রাজা বাদশার বেশে!
ফসলের মাঠে শকুন পড়েছে
গোয়াল হয়েছে শূন্য
পেটের চরে চলছে খরা শুকিয়ে গেছে প্রাণ
বাংলা মায়ের মুখের হাসি শোষকরা করেছে ম্লান
মোরা ও রানীর সাথে নাচ করিব
সুরার পেয়ারা আন-
তবু কৃষক কৃষানীর ঘামের জলে –
রাজার খাজনা ভরা নৌকা চলে
ঘরে ঘরে কালবসন্ত
হয়নি এবার ধান
তবুও আসিয়াছে সাহি এলান
দিতে হবে খাজনা
বকেয়া খাজনা না দিলে জমি হবে নিলাম-
ক্ষুধার্ত কৃষকের পেটে নাই ভাত
কি করে দিবে এত খাজনা সকলের মাথায় হাত –
যে গরিব দুখী কৃষক শ্রমিকের খাজনার মহরে
রাজার রাজকোষ ভরে আছে হিরে আর জহরে
রাজার ভান্ডার করেছে যারা পরিপূর্ণ
আজ তাদের গোলা শূন্য
পেটে নাই অন্য –
বল হে রাজা তবে এই রাজ্য রাজকোষ কার জন্য?
গরিবের ধন লুটছো যারা শাসনতন্ত্রের ছলে
অনাহারে মরছে তারা কামার কুমার তাঁতি কৃষক শ্রমিক জেলে কাতারে কাতারে দলে দলে
তবু রাজার হয় না হুশ
অধিকারের কথা বলতে গেলে বিদ্রোহী বলে বন্দী করে
সেনাপতি বলে খামোশ-
দিনে করো রাজ দরবার রাতে দেখো নাচ
কৃষকের কুমারী মেয়েরে
পায়ে পরাও নূপুর
সাজাও বাইজির সাজ
বাধ্য হয়ে নাছে কৃষানী
কাঁদে তার কুমারী প্রাণ
মদ্যপ পানে মগ্ন রাজা
তা তা থৈথৈ নাচে উদ্দাম!
সারা নিশি কাটে রাজার রংমহলে
রাজা কি বলে তারে এই না হলে ?
আমাদের এই সব বলতে মানা
বন্দী নারীরা খাস কামরায় এলে নাকি নজরানা মেলে
না আসিলে চাবুকের আঘাতে
শত শত নারী বান্দি অকালে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
বলবো না আর ভাবের কথা
মনের ভেতরে মরন ব্যথা
লিখব না আর কবিতা
গাইবো না আর গান
মোরা ও রানীর সাথে নাচ করিব সুরার পেয়ালা আন!
কামার কুমার জেলে মাঝি এবার ধরব জীবন বাজি
কুমার বানাবে না থালা বাটি
জেলে ফেলবে না জাল
কামার ইস্পাতে মারিবে না হাতুড়ি
ইমারতের অবস্থা হবে বেহাল
তাঁতী বুনবে না জামা কাপড় মুসলিম শাড়ি
শশ্যোর মাঠ রাখবো খালি
ফলাবো না আর ধান-
লিখব না আর কবিতা
গাইবো না গান
মোরা ও রাণীর সাথে নাচ করিব সুরার পেলাম আন!
ওহে নবী রাসূল দেব দেবী গুরু পন্ডিত ভিক্ষু সাধু রাজ মহারাজ –
কবিতার শেষে তোমাদের চরণে রেখে যাই ক্ষুধিতের প্রণাম
কামার কুমার জেলে তাঁতি মজুর মাঝি কৃষকের এই দেশে
শোষকের বিপরীতে-
তোমরা যারা সভ্যতা আনিয়াছ
কৃষক শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি
ক্ষুধিতের পেটে অন্য দিয়াছ
ফসলের মাঠে দিয়েছো প্রাণ
নারী আমাদের মায়ের জাতি দিয়েছে সম্মান –
নবজাতকের নিরাপদ আবাসভূমি
গড়িতে
দিয়েছে জীবন সপেছ মনো প্রাণ
মসজিদ মন্দির গির্জায় নিরাপত্তা দিয়েছ-
দিয়াছ অন্য বস্ত্র শিক্ষা চিকিৎসা বাসস্থান।
কালে মহাকালে মানবতার ক্লান্তিকালে জীবনের শুকনো কাননে বসন্ত আনিতে অকাতরে জীবন দিয়েছে যারা যুগে যুগে ছাত্র জনতা তোমাদের স্মৃতি চির অম্লান।
ওহে’ কৃষক শ্রমিক রাখাল সাঁওতাল তবলা হারমোনি আর নুপুর একতারা আন
সারা বাংলায় আজ বসাইবো পালা
গাইবো আত্ম মানবতার গান।
শোষিতের সংগ্রাম চলিবে অবিরাম ওহে শক্তিগামা হাতুড়িটা আন
ভাঙবো রাজার রংমহল
সাদা কালোর বৈষম্যের
করব অবসান
ওহে কৃষক কৃষাণী লাঙ্গল-জুয়াল আন-
মানুষের মানুষে ভেদাভেদ ভাঙিয়া বৈষম্যের বুকে লাঙ্গল চালাইয়া
মোরা করিব উঁচু নিচু সমানে সমান।
ওরে অত্যাচারী নির্বিচারী এবার তোমাদের পালা
মুখে তালা বুকে অনেক জ্বালা, জ্বালা মনের আগুন জালা
যাবতীয় বৈষম্যের বুকে লাঙ্গল চালা।

একাকিত্বের কীর্তন
কবি-এহছানুল আজিম
একাকীত্ব মানে পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া নয়
একাকীত্ব হলো আত্মবিশ্বাস
প্রবল ঝড়ে ভেঙে পড়া নয়।
মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে
দুটি পায়ের উপর ভর করে
মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়ানোর জন্য কেউ কখনো কি কাউকে সাহায্য করে –
যেজন দাঁড়াতে পারে
প্রিয়জন স্বজন বন্ধুবর সকলে তারে করে নেয় বরণ
কারণে অকারণে সকলে সদা করে স্মরণ-
সকলের ভারে সেই মানুষটি যখন নুইয়ে পড়ে ভেঙ্গে যায়
স্বার্থ শেষে মানুষরূপী ফানুস গুলো পুশ করে যাত্রাপথে নেমে যায় –
জগত সংসারের এটাই নিয়ম
আঁধার রাতে ঝড় বাদলে
লড়াই টা হয় নিজের
সফলতার পরে আবার
ছেড়ে যাওয়া মানুষগুলো দাবি করে কিসের ?
বন্ধুবান্ধব প্রিয়জন স্বজন
সুসময়ে সবাই ঘিরে থাকে
দুর্দিনে কেউ থাকে না
দেখে দুঃখ-কষ্ট গুলো বেড়ার ফাঁকে-
একাকীত্ব যখন নেমে আসে
তখন শুধু নিজের অর্জন গুলো পাশে থাকে
হোঁচট খেতে হয় জীবনের বাঁকে বাঁকে-
নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হলো নিজের বুদ্ধি জ্ঞান
নিঃসঙ্গতা মানে বিষন্নতা নয়
শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ তারে করো সম্মান
লোকে বলে প্রিয়জন কেউ হয় না
যদি না মেটাতে পারে প্রয়োজন
সেই বেশি কষ্ট পায় যে করে সকলের জন্য সুখ শান্তি আয়োজন।
পৃথিবীতে এমন কোন রশি বা রশ্নি নেই আটকাতে পারে মানুষের পাল
মানুষ আটকায় ততক্ষণ যতক্ষণ থাকে তার দৃষ্টিকোণে মায়াজাল-
মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে গিয়েছ যারা দূরে
সুখ শান্তির নীড় বেঁধেছো
আমায় নিঃসঙ্গ করে
একাকী পথের যাত্রী হয়েছি
সাগর সমুদ্র পাড়ি দিয়েছি এসেছি বহু দূরে-
আঁধার রাতে একা রেখে গিয়েছো যারা সরে
দুখের রজনী কাটিয়েছি একা
চাই না কারো ফুলের তোড়া এই সূর্যোদয়ের ভোরে-
এই নহে মোর শেষ
আবার হবে যাত্রা
রাত পোয়াবার পরে -
মানুষ মনুষ্যত্ব ভালোবাসার বাসা কোথায় দেখব
বিশ্ব জগৎ ঘুরে ঘুরে-
ধীরে বান্ধব ধীরে
অবহেলার ফুল কুড়াতে আসবো না আর ফিরে।

নগদ প্রেম
কবি-এহছানুল আজিম
ভালোবাসা চাও
আগে কিছু দাও।
প্রেমের হাটে যাও –
হরেক রকম পরসা আছে হরেক সাজে-আজিকার এই প্রেম বাজারে
অমূলধন আছে যত
দেখো তাহার মূল্য কত –
পাল্লায় তুলে ওজন কর
ছুইবার আগে চিন্তা করো
ক্রয় ক্ষমতা আছে কত তোমার ঐ দুই বাহুতে-
আমার আছে শত চাওয়া পারবে তো তা মেটাতে।
ভালোবাসা চাও আগে কিছু দাও –
একসাথে থাকতে পারি
আমি যা চাই তাই যেন পাই
মনে রেখো তাই।
প্রতিদিন আমি রেস্তোরাই যাইবো পছন্দের যত শত খাওয়ার
ইচ্ছে যত খাইব।
মাঝে মাঝে সমুদ্রে যাইবো
সুরসুরে বাতাসে শাড়ির আঁচল উড়াইয়া অজানায় হারাইবো-
ঢেউ অরঙ্গে হেলিয়া দুলিয়া
সমুদ্রের শীতল হাওয়ায় জুড়াইব মোর দেহ মন, জলের সঙ্গে সমুদ্র স্নানে করিব নাচন-
তরঙ্গের জলে বিজাইবো আমার এই সোনা বরন দেহ গাও
তুমিও যৌবনো উত্তাল সমুদ্রে পাল উড়াইয়া জলস্রানে ভাইবে আমার দেহ নাও।
ভালোবাসা চাও
আগে কিছু দাও।
হাতে হাত ধরে পথ চলতে চাও
মনে রেখো আমার যত ভর
তোমাকেই হবে নিতে
তুমি যত বেদনা যাতনা যত ব্যথা পাও –
ভালোবাসা চাও আমায় কথা দাও।

বাঁকা
কবি-এহছানুল আজিম
আমি শুরু থেকে বাঁকা
মেলেছি ঢালপালা আঁকাবাঁকা-
আমি বটবৃক্ষ ঢালপালা মেলেছি উদ্ধ গগনে জমিনে ফেলেছি ক্ষতবিক্ষত শতলতা
আমার ফল করে না ক্ষুধা নিবারণ তবু আসে মানুষ আমার ছায়াতল
আমার নামে মানুষ বাহুতে পায় বল
বট বৃক্ষের মতো হতে চায় মানবতাবাদী শতদল
অসহায় মানুষ ক্লান্তি পরে খুঁজে বটবৃক্ষের ছায়াতল
আমি পথ আমার পথে চলেছি একা আমার পথ আঁকাবাঁকা
তবুও আমার পথ ধরিয়া কত সন্ন্যাসী সাধন করিতে পূর্ণ চলে একা একা
আমার পথ ধরিয়া চলে আঁকাবাঁকা
আমি আকাশের বুকে বাঁকা চাঁদ
নিশি জাগিয়া আমারে দেখিতে কত শত মানুষের হৃদয়ে জাগে কত সাধ
আমার আলোয় পথ চলে পথিক দেখে না তো বাঁকা
বাঁকা চাঁদ ছাড়া আকাশের বুক সদা ফাঁকা
জীবন আঁকাবাঁকা
নদী চলে বহমান তার চলন বাঁকা
নদী পথে চলে সাম্পান
বাতাসে উড়ে তার পাল নদীর মতো বাঁকা
বইটা সোজা হলে নৌকা সোজা চলে ঘাটে বিরাইতে তারে করিতে হয় বাঁকা
তোমাদের ঘরের টিনের ছিদ্র বেয়ে ঘরে পড়ে যে আলো চেয়ে দেখো সে আলো কত বাঁকা
আমি সূর্য আলো ছড়াতে আলোকে হতে হয় বাঁকা –
জীবনের পথ আঁকাবাঁকা
বাঁকারে জয় করিতে না পারিলে জীবনটাই তোর ফাঁকা।


