নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম মহানগরে একটানা বৃষ্টিতে জনদূর্ভোগ বেড়েছে। টানা বৃষ্টি হওয়ায় নগরের বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যাওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে ভোগান্তিতে পড়েন অফিসগামী যাত্রী ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। ক্যালেন্ডারের পাতায় ভরা আষাঢ় হওয়ায় গত চার দিন ধরে অঝোরে ঝরছে আষাঢ়ের বৃষ্টি। তবে দিনের আলো ফোটার সঙ্গে মিষ্টি রোদের দেখা পেলেও হঠাৎ কালো মেঘে ঢাকা পড়ে গোটা শহর। সেই যে শুরু হয়েছে বৃষ্টি, থামার কোনো নাম নেই।
এদিকে টানা বৃষ্টিতে নগরের বাকলিয়া, চান্দগাঁও কাপাসগোলা, হালিশহর সহ বেশকিছু নিচু এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। নগরের অলিগলির রাস্তায় জমে রয়েছে পানি। এতে নগরবাসীর বেড়েছে দুর্ভোগ। টানা বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম। রাস্তায় গণপরিবহন চলাচল করলেও রিকশা-সিনজি অটোরিকশায় বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে অফিসগামী যাত্রীদের। অনেকে আবার কাকভেজা হয়ে অফিসে পৌঁছান।
দেওয়ানহাট মোড়ে বৃষ্টি ভেজা দুপুরে কথা হয় পথচারী জাহাঙ্গীর হাসানের সঙ্গে। তিনি বলেন, সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছি, আবার হাঁটতে হাঁটতে শরীর শুকাচ্ছে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করার পর অর্ধেক পথ হেঁটে এসে কোনোমতে একটা বাসে উঠতে পারছি।
নগরের সল্টগোলা ক্রসিং এলাকা থেকে আসা সিএনজি চালক মফিদুল ইসলাম বলেন, সিমেন্ট ক্রসিং, সল্ট গোলা ক্রসিং, বারেক বিল্ডিং, আগ্রাবাদ এলাকায় ভালোই যানজট দেখেছি। যাত্রীর চেয়ে বাস টেম্পো কম মনে হয়েছে। জায়গায় জায়গায় মানুষ দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির জন্য। কিন্তু বাসেও বেশ ভালোই ভিড় দেখেছি।
এদিকে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টির কারণে নগরের কোথাও যানবাহনের সংখ্যা কম আবার কোথাও লেগেছে যানজট। নিচু এলাকার কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে জলজটেরও। যদিও বৃষ্টি থামার পর জমে থাকা পানি সরে যাচ্ছে। তবে টানা বৃষ্টির সময় সিএনজিসহ গণপরিবহনের ঘাটতি এবং যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয় কর্মজীবি মানুষদের। আর তাতেই বেশ বিড়ম্বনায় পড়েছেন নগরবাসী।
এছাড়াও চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রথম দিনেও বৃষ্টির কারণে ভোগান্তিতে পড়ে পরীক্ষার্থীরা। দ্বিতীয় দিনের মতো এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার শুরুতে বৃষ্টিতে খুব একটা ধকল না পোহালেও পরীক্ষা শেষে ঝরো বৃষ্টিতে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে পরীক্ষার্থীদের।
অন্যদিকে আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, ২৪ ঘন্টায় চট্টগ্রামে ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। তবে গতকাল ২ জুলাই সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৭ মিলিমিটার এবং দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিন চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৬ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। তবে বৃষ্টি ঝরলেও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
এ বিষয়ে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আলী আকবর খান বলেন, চট্টগ্রামের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এ সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও এমন বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। তিনি আরও বলেন, মৌসুমি বায়ুর কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।