নিজস্ব প্রতিবেদক : চট্টগ্রাম মহানগর থেকে গ্রামে চিকিৎসাসেবা পিছিয়ে রয়েছে। গ্রামে প্রতি ২ হাজার ২শ জনের বিপরীতে মাত্র ১ জন চিকিৎসক। আর নগরে প্রতি ৩০০ জনের বিপরীতে একজন চিকিৎসক আছেন। চিকিৎসকের এমন তারতম্যে ব্যাহত হচ্ছে গ্রামীণ চিকিৎসা সেবা। ফলে গ্রামীণ এলাকার রোগীরা ভিড় করছেন শহরে।তবে চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলছেন, মাঠ পর্যায়ে এ চিত্র সঠিক নয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (চমেবি) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. ইসমাইল খান বলেন, গ্রাম এবং শহরের মধ্যে চিকিৎসকের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। বিভিন্ন উপায়ে শহরে চলে আসেন তারা। তবে এটা ঠিক, চিকিৎসকদের গ্রামে থাকার মত সেভাবে অবকাঠামো গড়ে উঠেনি। এরপরও সেবা প্রদান, পেশা ও কর্মস্থলের প্রতি আরও দায়িত্বশীল হলে গ্রামে পর্যাপ্ত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হবে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবাসনসহ বিভিন্ন নাগরিক সুবিধার কারণে কর্মস্থলের পরিবর্তে শহরে থাকেন তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মানবসেবার মত মহান পেশায় নিয়োজিত আছেন, সেটি মনে রাখতে হবে চিকিৎসকদেরকে। সেবা প্রদান আর কর্মস্থলের প্রতি আরও বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২ অনুযায়ী, চট্টগ্রাম জেলার জনসংখ্যা ৯১ লাখ ৬৭ হাজার ৩শ তিন জন। এর মধ্যে শহরে এলাকায় বসবাস করেন ৪৮ লাখ ৮৩ হাজার ২শ ৪৭ জন। আর গ্রামে বসবাস করেন ৪২ লাখ ৮৪ হাজার ৫৬ জন। চট্টগ্রামে এমবিবিএস বা বিডিএস ডিগ্রিধারী চিকিৎসক আছেন ১৪ হাজার ৪শ ৬১ জন। এর মধ্যে শহরে বসবাস করেন ১২ হাজার ৫শ ৯৮ জন। গ্রামে বসবাস করেন এক হাজার ৮শ ৬৩ জন।
চন্দনাইশে জনসংখ্যা ২ লাখ ৫২ হাজার ২৩৮ জন, এর বিপরীতে চিকিৎসক রয়েছেন ১৪০ জন। আনোয়ারায় জনসংখ্যা ৩ লাখ ১৯ হাজার ৪৮২ জন, এর বিপরীতে চিকিৎসক ১৪৩ জন। বোয়ালখালীতে জনসংখ্যা ২ লাখ ৫৮ হাজার ৬৭৫ জনের বিপরীতে রয়েছে চিকিৎসক ৩৩৮ জন, বাঁশখালীতে জনসংখ্যা ৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫৫ জনের বিপরীতে চিকিৎসক আছেন ২০৬ জন, ফটিকছড়িতে জনসংখ্যা ৬ লাখ ৪২ হাজার ৭৬ জনের বিপরীতে চিকিৎসক ১৯৪ জন, হাটহাজারিতে ৪ লাখ ৯৮ হাজার ১৭৯ জনের বিপরীতে চিকিৎসক ৩৭৫ জন, কর্ণফুলীতে ২ লাখ ৩ হাজার ৬৯৭ জনের বিপরীতে চিকিৎসক ৫৬ জন, লোহাগড়ায় ৩ লাখ ২৮ হাজার ২০৬ জনের বিপরীতে চিকিৎসক ১১৬ জন, মিরসরাইয়ে ৪ লাখ ৭২ হাজার ৭৭৭ জনের বিপরীতে চিকিৎসক ৫০ জন, পটিয়ায় ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭২ জনের বিপরীতে চিকিৎসক ২৭৪ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৩ লাখ ৯২ হাজার ৮৯৮ জনের বিপরীতে চিকিৎসক ১৮৫ জন, রাউজানে ৩ লাখ ৯৬ হাজার ৩৫০ জনের বিপরীতে চিকিৎসক ২২৪ জন, সন্দ্বীপে ৩ লাখ ২৭ হাজার ৫৫৩ জনের বিপরীতে চিকিৎসক ১২২ জন, সাতকানিয়ায় ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৫১ জনের বিপরীতে চিকিৎসক ১৫৮ জন এবং সীতাকুন্ডে ৪ লাখ ৫৭ হাজার ৬৮ জনের বিপরীতে চিকিৎসক ৩৩৩ জন।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মাদ ইলিয়াছ চৌধুরী আরো বলেন, প্রতিটি উপজেলায় পর্যাপ্ত ডাক্তার রয়েছেন। জনশুমারির সময় অনেকে শহরে থাকায় তারতম্য দেখা যাচ্ছে। আবাসন সংকটের কারণে চিকিৎসকরা কর্মস্থলে থাকেন না। পরিবার আর বিভিন্ন সুবিধার কারণে তারা শহরে থাকেন। কর্মক্ষেত্র চিন্তা করলে শহরের তুলনায় গ্রামে চিকিৎসক বেশি।