নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ দুই ধারায় বিভক্ত। নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে পুরোনো কোন্দল নতুন করে চাঙা হয়ে উঠেছে। নগর আওয়ামী লীগের কোন্দলের প্রভাব পড়েছে মোহরা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগে। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এবং কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম-৮ আসনের সংসদ সদস্য আবদুচ ছালামকে ঘিরে দুইটি ধারা চলে আসছে। দুই নেতাকে ঘিরে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পড়েছে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতারা।
জানা গেছে, মহানগর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বিরোধের প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিট সম্মেলনে। মোহরা ওয়ার্ডে ইতিমধ্যেই দুই পক্ষ ইউনিট পর্যায়ে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করছে। গত শুক্রবার ‘সি’ ইউনিট আওয়ামী লীগের কর্মীসভাকে ঘিরে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এতে তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পুলিশ উপস্থিত হয়ে দুই পক্ষকে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
গত শুক্রবার ওয়ার্ডের ‘সি’ ইউনিট আওয়ামী লীগের কর্মীসভার আয়োজন করে ইউনিট আওয়ামী লীগ। এই পক্ষটি নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। একতরফাভাবে সভা করার অভিযোগ করে সভাস্থলে উপস্থিত হয় ছালামের অনুসারীরা। এক পক্ষ কার্যালয়ে ও অন্য পক্ষ কার্যালয়ের নিচ অবস্থান নেয়। সভাকে ঘিরে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ায়। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা, হৈ-হুল্লোড় ও স্লোগান-পাল্টা স্লোগানে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশ উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মোহরা ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী নুরুল আমিন মামুন বলেন, দলের একটি বড় অংশকে বাদ দিয়ে কর্মীসভা ও সম্মেলন করার পাঁয়তারা করায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ওয়ার্ড কাউন্সিলর হিসেবে আমাকেও বলা হয়নি। মেয়র সাহেব ও পুলিশের অনুরোধে উপস্থিত হয়ে ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীদের আমরা সরিয়ে দিয়েছি। এরফলে কোনো অঘটনা ঘটেনি।
ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য অলিদ চৌধুরী বলেন, একটি পক্ষ পছন্দনীয় লোকদের নিয়ে একতরফাভাবে সম্মেলনের মাধ্যমে পকেট কমিটি গঠনের চেষ্টা করছে। এতে দলের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে।
দলীয় সূত্র জানায়, ১৫ দিন আগে ছালামের অনুসারীরা তিন ইউনিটে কর্মীসভা করেছেন। এই অংশের নেতা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. ফারুক বলেন, দলীয় গঠনতন্ত্র মেনে ত্যাগী-পরীক্ষিতদের নিয়ে নিয়মতান্ত্রিকভাবে ইউনিট ও ওয়ার্ড সম্মেলনের দাবি করে আসছিলাম। কিন্তু একটি পক্ষ স্বেচ্ছাচারিতা ও পক্ষপাতমূলক সম্মেলন করার পাঁয়তারা করছে। বিষয়টি সিনিয়র নেতা ও ইউনিট আওয়ামী লীগের নেতা নগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সমন্বয়ক সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্র আরো জানায়, অভিযোগ পাওয়ার পর মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেছেন। সম্মেলন করার জন্য ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের তিন নেতার সঙ্গে সমন্বয় করতে ছালাম অনুসারীদের পক্ষ থেকে তিনজনকে সম্পৃক্ত করেন। তারা হলেন, দলের সিনিয়র সদস্য এসএম আনোয়ার মীর্জা, নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ও মো. সেকান্দর।
নাছির অনুসারী হিসেবে পরিচিত ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ও যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুক খান বলেন, একটি পক্ষ বিচ্ছিন্নভাবে কর্মীসভা করেছে। তাদের তো সভা করার কোনো এখতিয়ার নেই।
যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুক খান বলেন, ইউনিটের কর্মীসভা শেষে দুই পক্ষের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নিয়ে সম্মেলনের বিষয়ে বৈঠক করা হবে। নগরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও নগর আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক করে সম্মেলনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানা গেছে, আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। এর আগে আগামী ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে ইউনিট ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের অসমাপ্ত সম্মেলন শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়।