সিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য পণ্য ও যাত্রিবাহী গাড়ি পুরোদমে চালু করতে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোকে আহবান জানিয়েছ্নে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র (প্রতিমন্ত্রী) বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী৷ বুধবার টাইগারপাসস্থ চসিক কার্যালয়ে নগরীর পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের সাথে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় মেয়র বলেন, সরকার সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতে সচেষ্ট হওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করার জন্য পণ্য ও মানুষবাহি গাড়ি পুরোদমে চালু করতে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর প্রতি আহবান জানাচ্ছি। যাত্রী, মালিক, গাড়ি ও সংশ্লিষ্ট কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে প্রশাসন সজাগ আছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের আড়ালে স্বাধীনতাবিরোধীরা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে জানিয়ে মেয়র বলেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের আড়ালে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক শক্তি ও জঙ্গীরা দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে। সাধারণ ছাত্ররা স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্র টের পেয়ে আন্দোলন থেকে সরে গেলেও স্বাধীনতাবিরোধীরা আন্দোলনের আড়ালে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। তাদের আন্দোলনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শ্রমজীবী মানুষরা। আন্দোলনের নামে তারা গাড়ি জ¦ালিয়ে, গাড়ি ভাংচুর করে পরিবহনখাতের বহু মানুষকে নি;স্ব করে দিয়েছে। এজন্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। একাত্তরে আমরা ওদের পরাজিত করেছি, চব্বিশেও করব। রাতে পরিবহনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে গাড়ি মালিক-শ্রমিকদের নেতৃত্বে কমিটি করে নিরাপত্তা টহল দিতে হবে। কোথাও কোন সমস্যা হলে সাথে সাথে প্রশাসনকে অবহিত করলে প্রশাসন ব্যবস্থা নিবে।
এসময় মেয়র পুলিশ প্রশাসনকে কোন গাড়ি সহিংসতার শিকার হলে গাড়ি মালিক মামলা করতে চাইলে মামলা গ্রহণ করার পাশাপাশি সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতে জোরালো ভূমিকা রাখার আহবান জানান। এ বিষয়ে সার্বিক সহযোগিতার আশ^াস দেন মেয়র।
সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরে মেয়র বলেন, আমি ইতোমধ্যে আগ্রাবাদে পে-পার্কিং চালু করেছি। কুলগাঁওতে বাস টার্মিনাল নির্মাণকাজ পুরোদমে চলছে। বাস স্টপেজ নির্ধারণে জরিপ করে স্থান নির্ধারণের পর উন্নত দেশগুলোর আদলে আলাদা রং দিয়ে বাস স্টপেজ চিহ্নিত করা হবে। ডিজিটাল ট্রাফিক লাইট সিস্টেম নিয়েও চিন্তা-ভাবনা করছি। পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো সহযোগিতা করলে সরকারের কোন একটি খাস জমি চিহ্নিত করে বরাদ্দ প্রদান করা হলে বাস ও ট্রাক-লরির জন্য টার্মিনাল করার জন্যও আমি পদক্ষেপ নেব।
সভায় অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. মাসুদ আলম বলেন, সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ কঠোর অবস্থানে আছে। পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকলে বাজারে পণ্যের সঙ্কট দেখা দিয়ে সাধারণ মানুষ কষ্ট পায়। এজন্য পুলিশ আপনাদের পাশে আছে আপনারা সরকার নির্ধারিত সময় ও গাইডলাইন মেনে পুরোদমে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা নিন।
বিআরটিএ’র চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মো. মাসুদ আলম বলেন, সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টায় দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার চিত্র বদলে গেছে। ফোর লেন হয়েছে, টানেল হয়েছে, মেট্রোরেল হয়েছে। এজন্য উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে ধরে রাখতে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক করতে হবে। এজন্য সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।
সভায় পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মাহবুবুল হক মিয়া, চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মনজুরুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল, আমজাদ হোসেন হাজারী, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পূর্বাঞ্চল কমিটির সভাপতি মৃণাল চৌধুরী, আরাকান সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা, উত্তর চট্টগ্রাম ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানউল্যা চৌধুরী হাসান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় ট্যাংক-লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রবিউল মাওলা, চট্টগ্রাম জেলা সড়ক মালিক গ্রুপের মহাসচিব হাজী মো. ইউনুছ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক অলি আহমদ, পণ্য পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কে এম মহিউদ্দিনসহ নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, আন্দোলনে আমাদের অনেক গাড়ি ভাংচুর করা হয়েছে, জ¦ালিয়ে দেয়া হয়েছে, শ্রমিকদের আহত করা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠুৃ বিচার চাই। আমরা পুরোদমে গাড়ি চালাতে চাই। এজন্য প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন। আন্দোলনের শুরু থেকেই মেয়র মহোদয় একাধিক সভা করেছেন, আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে মেয়র মহোদয়ের মাধ্যমে সরকারের কাছে আমাদের দাবি গাড়ি চলাচলের সময়সীমা দ্রুত তুলে নেয়া হোক। আন্দোলনের কারণে অনেক গাড়ি মালিক তাদের গাড়ি বন্ধ থাকায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এবং গাড়ির ডকুমেন্টস সময়মতো আপডেট করতে পারেননি। এমতাবস্থায় আগামী অন্তত এক মাস গাড়ির ডকুমেন্টস ফেইল থাকলে মামলা দেয়া থেকে বিরত থাকা হোক। গাড়ি রাখার জন্য চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত পার্কিং ও টার্মিনাল না থাকায় গাড়ির নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। এজন্য চট্টগ্রামে দ্রুত পার্কিং ও টার্মিনাল নিশ্চিতে পদক্ষেপ নেয়া হোক।
সভায় প্যানেল মেয়র মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন চসিক কাউন্সিলরবৃন্দের পক্ষে সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিতে চসিকের গৃহিত পদক্ষেপ তুলে ধরেন। চসিক সচিব মো. আশরাফুল আমিনের সঞ্চালনায় সভায় অংশ নেন আফরোজা কালাম, কাউন্সিলর মোঃ ইলিয়াছ, আবদুস সালাম মাসুম, মেয়রের একান্ত সচিব আবুল হাশেম, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মো. ইমাম হোসেন রানা, প্রধান প্রকৌশলী শাহীন উল ইসলামসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিবৃন্দ।