মোহাম্মদ জাহেদ উল্ল্যাহ চৌধুরী: দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদী সংশ্লিষ্ট সুবিধাভোগীদের বিভিন্ন সমস্যা দূরীকরণ ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। ৪৬ কোটি ৩৭ লাখ ৭২ হাজার টাকা ব্যয়ে হালদা প্রকল্পটি রিভিউ হচ্ছে। উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে হালদার দুই পাড়ে রাউজান ও হাটহাজারীর ৬টি পুরাতন হ্যাচারি সংস্কার করে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি, হ্যাচারির পুকুর সংস্কার, বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজের ম্যুরাল নির্মাণ, ডিমসংগ্রহকারী ও মৎস্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান, হালদা রক্ষায় অভিযান পরিচালনা ও আইন বাস্তবায়ন, দরিদ্র জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান এবং ওয়ার্কশপ, সেমিনার ও গবেষণা করা হবে। এর আগে ‘হালদা নদী প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্প দ্বিতীয় পর্যায়’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার।
প্রকল্প থেকে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মাণ বাদ দেওয়া হয়েছে। এটির নির্মাণ খরচ ছিল ৭ কোটি টাকা। ম্যুরাল নির্মাণের এ টাকা দিয়ে বিকল্প কিছু নির্মাণের চিন্তা ভাবনা করছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ ক্ষেত্রে নদীর পাড়ে দুই উপজেলা রাউজান ও হাটহাজারীতে মিনি ল্যাবসহ মৎস্য অফিস নির্মাণ, নদীর কুম খনন অথবা দুই উপজেলায় নতুন করে আরো দুটি হ্যাচারি নির্মাণের জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব উঠেছে। তবে এখনো কোনটি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে প্রকল্পের জন্য সংশোধিত ডিপিপি তৈরি করা হবে বলে জানা গেছে।
জানা গেছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। তবে তখন অর্থ ছাড় দিতে পারেনি মন্ত্রণালয়। তাতে প্রকল্প কাজে গতি ছিল না। এর কিছু দিন পর থেকে টাকা বরাদ্দ শুরু হলে প্রকল্প কাজে গতি আসে। কিন্তু ৫ আগস্ট দেশের ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর প্রকল্প নিয়ে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রণালয়। প্রকল্প থেকে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে রাউজান অংশে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মাণের অংশটি বাদ দেওয়া হয়। এ টাকা দিয়ে বিকল্প কিছু করার চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রায় ৭ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের মাধ্যমে দুই দশক আগে হালদা নদীর পাড়ে রাউজানের বিনাজুরী ইউনিয়নের কাগতিয়া, গহিরার মোবারকখীল ও পশ্চিম গহিরা এবং হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শার মাছুয়াঘোনা, শাহ মাদারি ও মদুনাঘাট বড়ুয়াপাড়ায় ৬টি হ্যাচারি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণগত ত্রটি, সময় মতো সংস্কার, তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হ্যাচারিগুলো থেকে প্রকৃত সুফল পায়নি ডিম সংগ্রহকারীরা। এরমধ্যে সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে রাউজানের বিনাজুরী ইউনিয়নের কাগতিয়া হ্যাচারি। ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে পশ্চিম গহিরা হ্যাচারিও। এ নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে ডিম সংগ্রহকারীদের। বর্তমানে রাউজানের গহিরার মোবারকখীল, হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শার মাছুয়াঘোনা, শাহ মাদারি ও মদুনাঘাট বড়ুয়াপাড়ার হ্যাচারি চালু থাকলেও নিয়মিত সংস্কারের অভাবে এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকায় সবগুলো হ্যাচারি থেকে প্রকৃত সুফল পাচ্ছে না ডিম আহরণকারীরা। তাতে বিভিন্ন সময়ে মারা যায় রেণু। নতুন প্রকল্পটির মাধ্যমে এই ৬ হ্যাচারি সংস্কার করা হবে।
হালদা গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক প্রফেসর ড. মো. মঞ্জুরুল কিবরীয়া বলেন, প্রকল্পে কোন কোন বিষয়গুলো রয়েছে তা এখনো জানি না। ২০১৬ সালে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত এর নেতৃত্বে বুয়েট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ে একটি যৌথ গবেষণা সম্পন্ন করে। গবেষণায় ২৭টি কর্ম পরিকল্পনা ও সুপারিশ প্রণয়ন করা হয়। এসব কর্ম পরিকল্পনা ও সুপারিশ হালদা প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে তাতে কোন সুফল মিলবে না। তাছাড়া ফটিকছড়ির হারুয়ালছড়ি ও ভুজপুরে হালদা বিধ্বংসী রাবার ড্যাম এবং নদীর উজানে মানিকছড়িতে ধ্বংসাত্মক তামাক চাষ বন্ধে কোন সিদ্ধান্ত আছে কিনা তা নিয়েও অজানায় রয়ে গেছি। চলতি বছরের ২৬ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে হালদায় ৭টি ব্রড মাছ ও দুটি ডলফিনের মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর কারণ নির্ণয় ও প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে হবে প্রকল্পের মাধ্যমে। অন্যথা প্রকল্পের সুফল পাবে না হালদা সংশ্লিষ্টরা। তাই হালদা প্রকল্পে কী কী বিষয় রয়েছে তা জানা দরকার, যদি না থাকে তাহলে রিভিউ করে সংশোধনি আনতে হবে।
অন্যদিকে হালদা প্রকল্প পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, রিভিউ হচ্ছে হালদা প্রকল্প। প্রকল্প থেকে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল নির্মাণ বাদ দেওয়া হয়েছে। এটির নির্মাণ খরচ ছিল ৭ কোটি টাকা। এ টাকা দিয়ে বিকল্প কিছু নির্মাণের চিন্তা ভাবনা করছে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ ক্ষেত্রে নদীর পাড়ে দুই উপজেলা রাউজান ও হাটহাজারীতে মিনি ল্যাবসহ মৎস্য অফিস নির্মাণ, নদীর কুম খনন অথবা দুই উপজেলায় নতুন করে আরো দুটি হ্যাচারি নির্মাণের জন্য প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব উঠেছে। তবে এখনো কোনটি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে প্রকল্পের জন্য সংশোধিত ডিপিপি তৈরি করা হবে বরে তিনি জানান।