চবি প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষার্থীদের ওপর গত ১৫ জুলাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার ঘটনায় ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেছেন এক শিক্ষার্থী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে এই হামলার ঘটনায় উক্ত মামলায় আরও ৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। চবির ২০১৯-২০ সেশনের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আবু হাসান বাদী হয়ে হাটহাজারী মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন। হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা এ মামলাটি গ্রহণ করেছি। তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
মামলার বাদি মো. আবু হাসান বলেন, সেদিন আমরা মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার হয়ে যাচ্ছিলাম। তখন অভিযুক্তরা আমাদের উপর অতর্কিত হালমা চালায়। এতে আমার বন্ধু মাহবুবর রহমান গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় ১৫ জনসহ ৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে আমি হাটহাজারী থানায় মামলা দায়ের করেছি। বেশকিছু অভিযুক্ত নাম না জানার কারণে মামলায় উল্লেখ করা হয়নি। তবে পুলিশের তদন্ত শেষে পরবর্তীতে বাকিদের ব্যাপারেও পুলিশ ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে। মামলার আসামিরা হলেন- ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী সৌমেন দত্ত, একই শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুজ্জামান, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের শিক্ষার্থী আবরার শাহরিয়ার, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মীর্জা খবির সাদাফ খান, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী খালেদ মাসুদ, ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সাইদুল ইসলাম সাঈদ, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মিজান শেখ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আকিব জাবেদ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী অনুপ সরকার আকাশ, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী তায়েব পাঠান, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের বোটানি বিভাগের শিক্ষার্থী তানভীর আলম আকাশ, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুজ্জামান ওমর, ২০২০-২১ ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নাঈম এবং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের সমাজতত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী আরাফাত রায়হানসহ ৪০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে এ মামলায়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৫ জুলাই বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের প্রাঙ্গণে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষে মিছিল করলে অভিযুক্ত সৌমেন দত্তের নেতৃত্বে এজাহারে থাকা বাকি অভিযুক্তরা হাতে থাকা ধারালো রামদা চাপাতি, কিরিস, লোহার রড, স্ট্যাম্প ও লাঠিসোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময়ে সৌমেন দত্ত স্ট্যাম্প দিয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের সিএসই বিভাগের শিক্ষার্থী ভুক্তভোগী মো. মাহাবুবুর রহমানের মাথায় আঘাত করে। এতে তার মাথা ফেঁটে যায় এবং সে গুরুতর আহত হয়। এছাড়া আরেক অভিযুক্ত মোহাম্মদ নাইম কাঠের লাঠি দিয়ে ভুক্তভোগী মো. মাহাবুবুর রহমানকে এলোপাথাড়ি মেরে তার পিঠ থেঁতলে দেয়।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয়, অন্যান্য অভিযুক্তরা হাতে থাকা দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে এবং এলোপাথাড়ি সবাইকে মারধর করতে থাকে। এছাড়া অভিযুক্তরা আন্দোলনে থাকা নারী শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করে বিভিন্নভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে হেনস্তা করে। সেইসঙ্গে কোটা সংষ্কার আন্দোলন থেকে সরে না দাড়ালে তারা আমাদের প্রাণ নাশের হুমকি দেয়৷