মহেশখালী প্রতিনিধি: বসুন্ধরা গ্রুপের এলপিজি বহনকারী একটি লাইটারেজ জাহাজে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া পয়েন্টে রোববার দিনগত রাত ১টার দিকে বিস্ফোরণ হয়ে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। ভোর পর্যন্ত উদ্ধারকাজ চালিয়ে ওই জাহাজে থাকা ৫৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী। এ ঘটনায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৯ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব।
কুতুবদিয়া কোস্ট গার্ড পূর্ব জোনের কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট শাকিব মেহবুব জানান, কুতুবদিয়ার কৈয়ারবিল পয়েন্টে নোঙর করা সুফিয়া নামে এলপিজি বহনকারী একটি লাইটারেজ জাহাজে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। খবর পেয়ে কোস্ট গার্ড ও নৌবাহিনী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। জাহাজটিতে আগুন লাগার পরপরই এর পাশে থাকা মাদার ট্যাংকারে আগুন ধরে যায়। তবে মাদার ট্যাংকারটির আগুন কয়েক ঘণ্টার মধ্যে নেভানো সম্ভব হলেও লাইটারেজের আগুন এখনো পুরোপুরি নেভেনি।
জানা যায়, জাহাজে আগুন লাগলে নাবিকরা সাগরে লাফ দেয়। পরে নাবিকদের উদ্ধার করা হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন জানিয়েছেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে।
খবর পেয়ে রাতেই উদ্ধারকাজ শুরু হয়েছে উল্লেখ করে নৌবাহিনী কর্তৃপক্ষ জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে এবং জাহাজে থাকা ক্রুদের উদ্ধারে যোগ দিয়েছে নৌবাহিনীর জাহাজ। পাশাপাশি চট্টগ্রাম থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে যুক্ত হয়েছে কোস্ট গার্ড ও বন্দরের জাহাজ।
স্থানীয়রা জানায়, বি-এলপিজি সুফিয়া’ নামের জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহিনোঙরে অবস্থান করছিল। রাত ১টার দিকে জাহাজটি বিস্ফোরণ হয়ে আগুন ধরে যায়। এদিকে আগুন নেভাতে কাজ করছে চট্টগ্রাম বন্দরের চারটি উদ্ধারকারী জাহাজ, মাদার ভেসেলের (বড় জাহাজ) নিজস্ব টাগবোট এবং নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের টিম।
এ ঘটনায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৯ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জানান, দুই জাহাজের আগুন নেভানো গেছে।তবে লাইটার জাহাজ থেকে মাঝেমধ্যে আগুন বের হচ্ছে। লাইটারেজ জাহাজের ৩১ জন নাবিককে উদ্ধার করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাদার ভেসেল ‘ক্যাপটেইন নিকোলাস’ থেকেও উদ্ধার করা হয়েছে ২৭ জন নাবিককে। তারা সবাই এখন বিপদমুক্ত। তিনি আরও জানান, এখনো আমাদের উদ্ধারকারীদল, নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ড সেখানে কাজ করছে।
ঘঠিত তদন্ত কমিটির ৯ সদস্যের প্রধান করা হয়েছে বন্দরের সদস্য (হার্বার অ্যান্ড মেরিন) কমোডর এম ফজলার রহমানকে। এই কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। কমিটিতে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, ডিজিএফআই, এনএসআই, নৌপরিবহন অধিদপ্তরসহ অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিরা আছেন।
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ইস্ট জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন জহিরুল হক বলেন, লাইটারেজের শুধু পেছনের দিকের একটি অংশে আগুন জ্বলছে। বাকিটা নেভানো সম্ভব হয়েছে। ট্যাংকারটির পেছনের একটি অংশে কার্গোহোল্ডে পর্যাপ্ত গ্যাস রয়ে যাওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লাগছে। আগুন নিভে যাওয়ার পর আবারও জ্বলে উঠছে। তাই আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করতে আরো কিছুটা সময় লাগবে বলে তিনি জানান।