নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামে স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার দায়ে স্বামী আবুল কাশেমমে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন একটি আদালত। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক ফেরদৌস আরা ফটিকছড়ি উপজেলার ভূজপুর এলাকায় এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় এ রায় ঘোষণা করেন। একইসঙ্গে এক লাখ অর্থদণ্ডও করা হয়েছে তাকে। এছাড়া নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় ওই গৃহবধূর শ্বশুরকে খালাস দিয়েছেন বিচারক।দণ্ডিত আবুল কাশেম বাগানবাজার ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর গ্রামের বাসিন্দা।
রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বেঞ্চ সহকারী কফিল উদ্দিন জানান, নিজ স্ত্রীকে পুড়িয়ে মারার দায়ে আসামি ইমাম হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই রায়ে তাকে এক লক্ষ অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন বিচারক। মোট ১২ জন সাক্ষী ও একজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য রেকর্ড করা হয়েছে। রায় ঘোষণার সময় আসামি ইমাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় অপর আসামি আবুল কাশেমকে খালাস দেয়া হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয় ইমাম-ফাতেমা দম্পতি। বিয়ের পর স্বামী এবং শ্বশুড় কারণে-অকারণে ফাতেমাকে মানসিক নির্যাতন করতো। এছাড়াও তার কন্যা সন্তান হওয়ায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন কটূক্তিও করতো। ২০২১ সালের ১৩ মার্চ দিবাগত রাত ৩টায় ফাতেমার বাবাকে ফোন করে তার স্বামী জানায় জানায়, ফাতেমার গায়ে আগুন লেগেছে। সাথে সাথে তার বাবা বাড়ির উঠোনে গিয়ে দেখেন তার মেয়ের মাথা-মুখমণ্ডলসহ অধিকাংশই আগুনে পুড়ে গেছে। ফাতেমাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক ঢাকায় রেফার করে।
হাসপাতালে নেওয়ার সময় ফাতেমা জানান, ঘটনার দিন তার স্বামীর বাড়িতে ফেরা নিয়ে তর্কাতর্কি হলে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দসহ মারধর করে। একপর্যায়ে তার গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ১৫ মার্চ গৃহবধূর স্বামী এবং শ্বশুড়কে আসামি করে ভূজপুর থানায় মামলাটি দায়ের করেন বাদী। একইবছরের ১৬ মার্চ ভোর সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার তদন্ত শেষে দ্বিতীয় তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ভুজপুর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক মো. জাকির হোসেন ২০২১ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০২২ সালের ৩১ মার্চ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।