নিজস্ব প্রতিবেদক: চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী, গণমাধ্যমকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধির অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘আমিও জিততে চাই’ নামে ক্যাম্পেইন। বুধবার সকালে নগরের থিয়েটার ইনস্টিটিউটে (টিআইসি) এ ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়। শুরুতে ছিল রেজিস্ট্রেশন পর্ব। এরপর জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান।সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের সিনিয়র রিজিওনাল ম্যানেজার মো. সদরুল আমিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি চিফ অফ পার্টি আমিনুল এহসান।
তিনি বলেন, আমাদের সবার জীবনের সমস্যাগুলোর দিকে তাকালে কিছুটা মিল খুঁজে পাব। যেমন, ট্রাফিক সমস্যা, ডেঙ্গু আতঙ্ক। এছাড়া বেকারত্বের মতো সমস্যাগুলো আগে থেকেই রয়েছে। কিন্তু দেশে ক্ষমতায় পরিবর্তন এলেও আমাদের জীবনে পরিবর্তন আসে না। আমিনুল এহসান বলেন, ‘আমিও জিততে চাই’ প্ল্যাটফর্ম থেকে আমরা আপনাদের দাবি সরকার ও রাজনৈতিক দলের কাছে নিয়ে যাব। আর এর সাফল্য নির্ভর করছে আপনাদের অংশগ্রহণের ওপর।পরে ‘যুব কর্মসংস্থান: প্রত্যাশা ও সুপারিশ’ শীর্ষক পলিসি ডায়ালগে অংশগ্রহণ করেন ক্লিপটন গ্রুপের ডিরেক্টর এবং সিইও এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
সরকারি চাকরির পেছনে তারুণ্যের একরোখা আগ্রহ নিয়ে তিনি বলেন, আসলে সরকারি চাকরি মানে নিশ্চিত জীবন। কোনো জবাবদিহি নেই। বেসরকারি চাকরিতে সেটা নেই। ফলে তরুণদের কাছে সরকারি চাকরি লোভনীয় বিষয়। অন্যদিকে বেসরকারি চাকরিতে এ সুযোগ নেই।
এমডিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যারা উদ্যোক্তা আছেন, তাদের অধিকাংশ কোথাও না কোথাও জব করেছেন। সেই অভিজ্ঞতা দিয়ে তারা উদ্যোক্তা হয়েছেন। চাকরি করে জমানো টাকা ও ব্যাংক লোন দিয়ে তারা ব্যবসা শুরু করেন।
তাই আগামী দিনের উদ্যোক্তাদের বলতে চাই, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট সনাতনী। কোনো ইন্টার্নশিপ বা জব না করেই তরুণরা এমবিএ বা মাস্টার্স করে ফেলেন। কিন্তু আমাদের দেশের পরিবারগুলো সুযোগ না দিয়েই চাকরির জন্য সন্তানকে পাঠিয়ে দেয়। ফলে তাদের হন্য হয়ে ঘুরতে হয়। যেহেতু বাজার ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো অভিজ্ঞতাকেই মূল্য দেবে।
এ সময় আইএলও হেড অব চিটাগাং অফিস অ্যালেক্সসিউস চিছাম বলেন, শ্রম বাজারের সঙ্গে শিক্ষার মধ্যে অনেক অসঙ্গতি আছে। আমি নিজেও অনেক সুযোগ পাইনি। গ্রাম ও শহরের শিক্ষায় পার্থক্য আছে। চাকরির বাজারে বিদেশ থেকে পড়ে আসা, ভালো ইংরেজি জানে এমন মানুষের সঙ্গে আমাকে ফাইট দিতে হয়।
চিটাগং ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক প্রেসিডেন্ট ফারহানা যুথী বলেন, আমাদের সামাজিকভাবে উদ্যোক্তা হওয়া কঠিন। টাকা কোথায় পাব, লোন কে দেবে- এসব রিস্ক আছে। পরিবারগুলো সবসময় বলে স্থায়ী চাকরি প্রয়োজন। না হলে দায়িত্ব নিতে পারবে না। এ কারণে তরুণরা উদ্যোক্তা রিস্ক নিতে চায় না।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিএনসিসির কর্ণফুলী রেজিমেন্টের সাবেক অ্যাডজুট্যান্ট আবদুল্লাহ আল মামুন ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ইয়ুথ চিফ এএনএম তামজীদ।
এর আগে ইউএসএইডের অর্থায়নে ও ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এ ক্যাম্পেইনে ছিল নাগরিক সমস্যা নিয়ে থিয়েট্রিকাল পারফর্ম্যান্স, কুইজ ও ভিডিও মেসেজ প্রতিযোগিতা এবং ক্যাম্পেইনের রিল প্রদর্শনী। শেষে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। পরে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ও মাল্টিপার্টি এডভোকেসি ফোরামের (ম্যাফ) প্রতিনিধি ক্যাম্পেইনের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।ইউএসএইডের স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিএল) প্রকল্পের আওতায় ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল ‘আমিও জিততে চাই’ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে সারাদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলায় আলোচনা, নাট্য প্রদর্শনী, বিতর্ক প্রতিযোগিতাসহ নানা কর্মসূচি পরিচালনা করছে।