মোহাম্মদ জাহেদ উল্ল্যাহ চৌধুরী: চলতি অর্র্থ বছরের শেষ দেড় মাসে ২ লাখ ১১ হাজার ৬০৮ মেট্টিকটন ছোলা আমদানি হয়েছে। পবিত্র রমজান মাসে ছোলার সংকট হবেনা বলে ব্যবসায়ীরা জানান। এখনো পর্যাপ্ত ছোলা মজুদ রয়েছে। বর্তমানে দামও নিম্নমুখী।
চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, এ বছরতো সংকটের বা সরবরাহের কারণে ছোলা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ শুধু জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারির ১৭ দিনে ছোলা পুরো বছরের চাহিদার চেয়ে অনেক বেশি আমদানি হয়েছে, যা পুরো গত বছরের তুলনায় ১ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। এরপর বাজার পর্যায়ে যথাযথ মনিটরিং থাকলে দাম বাড়ার সুযোগ থাকবে না।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকার থেকে পাওয়া বিশেষ সুবিধায় বিপুল পরিমাণে ছোলা আমদানি হয়েছে। চাহিদার চেয়ে বেশি থাকায় এবার ছোলার বাজার চড়া হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। উল্টো ধীরে ধীরে দাম আরো কমবে। গত বছরের তুলনায় দাম বাড়তি থাকার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের কূটকৌশল এবং অন্য পক্ষ ডলারের উচ্চ দর বলে মনে করছেন।
উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র থেকে জানা গেছে, রমজানের এক মাসে ছোলার চাহিদা থাকে প্রায় ৮৭ হাজার থেকে ৯০ হাজার মেট্টিক টন। অথচ চলতি বছরে রমজানকে লক্ষ্য করে ডিসেম্বর থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছোলা আমদানি হয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার ৬০৮ মেট্টিকটন। যা ২০২৪ সালে রমজানকে লক্ষ্য করে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে আমদানি হয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন। এছাড়া বছরে দেড় লাখ চাহিদার বিপরীতে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে ছোলা আমদানি করা হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৩২ মেট্রিক টন। আর চলতি অর্থবছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছোলা আমদানি করা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৩৭৯ মেট্রিক টন।
বুধবার খাতুনগঞ্জ, রিয়াজউদ্দিন বাজার এবং পাহাড়তলী বাজারে দেখা গেছে, পাইকারিতে ছোলা মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৯১ থেকে ৯৬ টাকায়। সরবরাহ বাড়ায় ১৫ দিন আগের তুলনায় ছোলার কমেছে ৫ টাকা। আর খুচরা বাজারে মানভেদে ১০৫ টাকা থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্যাকেটজাত ছোলার মধ্যে বিপিএম ১৫০ টাকা এবং এসিআই গোল্ড বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকা। এক সপ্তাহ আগেও পাইকারি বাজারে ১১০ টাকা থেকে ১২৫ টাকা এবং এক মাস আগে ১১৮ টাকা থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে গত বছর রমজানমাসে ছোলা বিক্রি হয়েছে ৯৫ টাকা থেকে ১১০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের নব নির্বাচিত কমিটির বন্দর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিষয়ক সম্পাদক মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, আর্ন্তজাতিক বাজারের দাম কমায় ও সরকারের সহযোগিতায় ছোলার বাজার নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। খাতুনগঞ্জে ছোলার বস্তা প্রতি বুকিংয়ে দাম তিনমাস আগে ছিলো ৪ হাজার ৪০০ টাকা। আর এখন বস্তা প্রতি বুকিংয়ে দাম চলছে ৩ হাজার ২০০ টাকা। তাই কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যেভাবেই চেষ্টা করুক দাম বাড়াতে পারবে না।
গত বছরের তুলনায় দাম কমবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে খাতুনগঞ্জ ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুর রহমান বলেন, দাম এখন যত আছে, তার তুলনায় কমবে। তবে গত বছরের তুলনায় কমবে বলে মনে হয় না। কারণ অস্ট্রেলিয়ার বাম্পার ফলন ও ডিউটি ফি কমায় আমদানি পর্যাপ্ত পরিমানে হয়েছে। কিন্তু ডলার দর বেশি থাকায় ও পরিবহন খরচ বাড়তি থাকায় দাম গতবছরের মতোই থাকবে বলে মনে হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের তৈয়্যবিয়া ট্রেডার্সের সত্বাধিকারী ও আমদানিকারক সোলায়মান বাদশা বলেন, বাজার শান্ত করা বা অশান্ত করা নির্ভর করবে করপোরেট প্রতিষ্ঠাগুলোর উপর। আকিজ, নাবিলসহ অনেক প্রতিষ্ঠান ছোলা আমদানি করেছে। গত বছরের চেয়ে অনেক কম দামে এবার ছোলা কিনতে পেরেছি। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সহযোগিতা করলে দাম অনেক কমে আসবে।
অন্যদিকে পাহাড়তলী বাজারের ডাল ব্যবসায়ী সাফকাত হোসেন বলেন, ছোলার চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি আসছে বলে আমরা খবর পাচ্ছি। তাই একটু সময় নিয়ে একটা নির্দিষ্ট দামে আসার পর কেনার চিন্তা করেছি। নতুবা দেখা যাবে, যে দামে কিনবো সে দামেও বিক্রি করতে পারবো না।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের ব্যবসায়ী রিটন বলেন, এ বছর অস্ট্রেলিয়ায় ছোলার বাম্পার ফলন হয়েছে। তাই দামও কম পাওয়া গেছে। এদিকে সরকারও ডিউটি ফি কমিয়ে উৎসাহিত করায় আমাদের আমদানিকারকরা আমদানিও করেছে। তবে দর স্থির না হওয়া পর্যন্ত খুচরা ব্যবসায়ীরা অবজারভেশনে থাকায় দাম নিয়ে এখনও কিছু বলা যাবে না।
