আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মুষলধারে বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত দক্ষিণ কোরিয়ায় এখন পর্যন্ত চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এক হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।অকাল এই বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন চলবে বলে কর্তৃপক্ষ সতর্ক করেছে, জানিয়েছে বিবিসি।যে চারজনের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে দুজনের বয়স ৮০-র ঘরে। এদের একজন বাড়ির বেইজমেন্ট থেকে বৃষ্টির পানি সরানোর চেষ্টা করছিলেন বলে ধারণা কর্তৃপক্ষের।গাড়ির ওপর একটি দেয়াল ধসে পড়ার ঘটনায় তৃতীয় ব্যক্তি চাপা পড়েন। তার কিছুক্ষণ আগে তিনি তার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে গাড়িটি ‘ভেসে যাচ্ছে’ বলে জানিয়েছিলেন। চতুর্থ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে।“আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না, এমনটা কী করে হতে পারে,” বলেছেন গোয়াংজু শহরের এক ক্যাফে মালিক কিম হা-মিন। জীবদ্দশায় এত বৃষ্টি এবারই প্রথম দেখলেন তিনি।রেকর্ড বৃষ্টিপাতের কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার তড়িঘড়ি আবহাওয়াজনিত দুর্যোগ সতর্কতা সর্বোচ্চ স্তরে উন্নীত করেছে।“পানিতে সব ডুবে গেছে, খালি (বাড়ির) ছাদ ছাড়া,” অনলাইনে এমনটাই লিখেছেন ক্ষতিগ্রস্ত এক এলাকার বাসিন্দা।
বৃষ্টিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার পশ্চিম উপকূলের শহর সেওসান, সেখানে মাত্র ১২ ঘণ্টায় ৪০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া সংস্থা একে শতাব্দীতে একবার ঘটে এমন ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করেছে।সোশ্যাল মিডিয়াতে আসা ছবি ও ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, অসংখ্য বাড়ি ও গাড়ি ডুবে গেছে, আসবাবপত্রের টুকরো পানিতে ভাসছে।গোয়াংগজুতে বৃহস্পতিবার ৪২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে।ক্যাফে মালিক কিম বলছেন, তিনি খুবই আতঙ্কিত।“আমি আগে কখনো এখানে বন্যা দেখিনি, কারণ এই এলাকায় কোনো নদী বা ঝরনা নেই।”বৃষ্টির পানিতে ক্যাফে প্লাবিত হওয়ায় সেটি বন্ধ রাখতে হয়েছে ২৬ বছর বয়সী এ তরুণীকে।“আমি পানি বের করে ফেলেছি, কিন্তু নর্দমা থেকে আসা গন্ধ এত বাজে যে দোকান খুলতেই পারছি না,” বলেছেন তিনি।
ভারি বর্ষণের কারণে বেশ কয়েকজনের আহত হওয়ারও খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুইজন ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা বা হাইপোথারমিয়ায় ভুগছেন, দুইজন পায়ে আঘাত পেয়েছেন।বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ এক হাজার ৩০০ জনের বেশি লোককে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়েছে।কর্তৃপক্ষ লোকজনকে নদীর তীর, খাড়া ঢাল এবং মাটির নিচের কক্ষ বা স্থাপনা থেকে দূরে থাকতে অনুরোধ করেছে। ভূমিধস ও হড়কা বানের সম্ভাবনা প্রকট বলে সতর্কও করেছে তারা।দক্ষিণ কোরিয়ার আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ বলছে, উত্তর-পশ্চিমের শুষ্ক বায়ু দক্ষিণ থেকে আসা গরম ও আর্দ্র বায়ুর সঙ্গে মিশে বড় মেঘ তৈরি করায় এ ধরনের তুমুল বৃষ্টি দেখা যাচ্ছে।তবে আগামী সপ্তাহেই দক্ষিণ কোরিয়াজুড়ে তাপমাত্রা বাড়বে, এমনকী তাপদাহেরও সম্ভাবনা আছে, বলছেন আবহাওয়াবিদরা।
