নিজস্ব প্রতিবেদক: দীর্ঘ এক যুগ পর আগামী ১ নভেম্বর চট্টগ্রামের বাণ্যিজিক এলাকা আগ্রাবাদে অবস্থিত ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে অনুষ্ঠিত হবে চেম্বারের নির্বাচন। গত ১১ আগস্ট বিকেলে চেম্বারের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন বোর্ডের প্রধান ও চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক মনোয়ারা বেগম। তফসিল অনুযায়ী ৭ সেপ্টেম্বর নির্বাচনী বোর্ড প্রাথমিক ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ হবে ১৪ সেপ্টেম্বর। নির্বাচনের প্রার্থী ফরম বিক্রি চলবে ১৪ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর। জমাদানের শেষ তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর। ২৫ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক ও ৫ অক্টোবর চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।নির্বাচন বোর্ডের সদস্য হিসেবে আছেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান এবং বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (সাধারণ শাখা) আহমেদ হাছান।
নিয়ম অনুযায়ী চট্টগ্রাম চেম্বারের ২৪ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদের ১২ জন পরিচালক সাধারণ সদস্যদের ভোটে, ছয়জন পরিচালক সহযোগী সদস্যদের ভোটে, তিনজন পরিচালক টাউন এসোসিয়েশন থেকে ও তিনজন পরিচালক ট্রেড গ্রুপ থেকে নির্বাচিত হবেন।
এদিকে চেম্বারের সংস্কার ও প্রকৃত ভোটারের প্রত্যক্ষ ভোটে নেতা নির্বাচনের লক্ষে নানা কার্যক্রমও চালিয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসক ও স্বয়ং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন শাখা। ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে ছেঁটে ফেলা হয়েছে অকার্যকর ও ভুয়া ভোটার। এজন্য তদন্ত কমিটিও করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ২০ আগস্ট বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠন শাখা-১ এর একটি চিঠিতে অকার্যকর ও ভুয়া ভোটারদের সদস্যপদ নবায়ন না করতে এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সুযোগ না দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। তারই প্রেক্ষিতে গত ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম চেম্বার প্রশাসক নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দিয়ে চারটি টাউন এসোসিয়েশন ও চারটি ট্রেড গ্রুপকে ভোট প্রদানের সুযোগ না দেওয়ার নির্দেশনা দেন। এরমধ্যে টাউন এসোসিয়েশনের সদস্যরা হলো- পটিয়া এসোসিয়েশন অব ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, বোয়ালখালী এসোসিয়েশন অব ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রি, হাটহাজারী এসোসিয়েশন অব ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এবং রাঙ্গুনিয়া এসোসিয়েশন অব ট্রেড এন্ড ইন্ডাস্ট্রি।এছাড়া চারটি ট্রেড গ্রুপের মধ্যে রয়েছে- চট্টগ্রাম ক্ষুদ্র পাদুকা শিল্প মালিক গ্রুপ, চট্টগ্রাম টায়ার টিউব ইম্পোর্টার্স এন্ড ডিলার্স গ্রুপ, চিটাগাং ডাইজ এন্ড কেমিক্যালস ইম্পোর্টার্স এন্ড ডিলার গ্রুপ এবং চিটাগাং মিল্ক ফুড ইম্পোর্টার্স গ্রুপ। এছাড়াও অন্তত হাজার খানেক অকার্যকর ও ভুয়া ভোটার বাদ পড়ছেন।
অন্যদিকে, গত ২০ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এস.আর.ও নং ১৪৪-আইন/২০২৫ এর মাধ্যমে জারিকৃত বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা, ২০২৫ এর ধারা ১৮ এর উপধারা (৪) এ উল্লেখ করা হয়- ‘ফেডারেশনসহ সকল বাণিজ্য সংগঠনের নির্বাহী কমিটি বা পরিচালনা পর্যদে কোনো ব্যক্তি পরপর দুই মেয়াদ শেষে অন্য একটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করিয়া পরবর্তীতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করিতে পারিবেন’ শর্ত জারি করা হয়। সে অনুযায়ী গত ২০২১ এবং ২০২৩ সালে পরপর ২ নির্বাচনে পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন এমন ১২ জন এবার ভোটে প্রার্থী হতে পারবেন না। ওই ১২ জনের তালিকা গত ২৪ আগস্ট চেম্বার প্রশাসকের মাধ্যমে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই ১২ জন হলেন- অঞ্জন শেখর দাশ, নাজমুল করিম চৌধুরী শারুন, সৈয়দ মোহাম্মদ তানভীর, এ. কে. এম. আকতার হোসেন, মো. অহীদ সিরাজ চৌধুরী, তরফদার মো. রুহুল আমিন, বেনাজির চৌধুরী, ইফতেখার হোসেন, মো. রাকিবুর রহমান, মোহাম্মদ আদনানুল ইসলাম, জহিরুল ইসলাম চৌধুরী ও মাহবুবুল হক।
এর আগে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। এরপর চট্টগ্রাম চেম্বার পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সদস্যদের পদত্যাগের জন্য দফায় দফায় বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরা। পরে চেম্বারের সভাপতি ও দুই সহ-সভাপতিসহ ২১ পরিচালক পদত্যাগ করেন। এরপর গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রশাসকের দায়িত্ব নেন তৎকালীন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা। শুরুতে তার মেয়াদ ছিল ১২০ দিন। পরে আরও দুই দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ৩ জুলাই এর প্রজ্ঞাপনে তার মেয়াদ আরও ৬০ দিনের জন্য বাড়ানো হয়। আগামী ৮ সেপ্টেম্বর শেষ হচ্ছে তার মেয়াদ।
